বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি (জিইবি) বিভাগে গত ৮ এপ্রিল নবাগত শিক্ষার্থীদের নবীনবরণ ও সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
জিইবি সোসাইটির পক্ষ থেকে সোমবার, সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে ‘জিইবি সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা-২০১৯’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিকেল ৪টা থেকে নবীনবরণের মাধ্যমে শুরু করে রাত পর্যন্ত চলে এই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্মানিত প্রক্টর অধ্যাপক জহির উদ্দিন আহমেদ এবং অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন লাইফ সাইন্সের ডিন, বিভাগীয় প্রধান এবং জিইবি সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ডঃ মোঃ শামসুল হক প্রধান।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন জিইবি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও জিইবি সোসাইটির কোষাধক্ষ্য ডক্টর গোকুল চন্দ্র বিশ্বাস। জিইবি সোসাইটি কর্তৃক আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি বলেন, “আমি মনে করি আজকের এই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বড় ভাই ও ছোট ভাইদের মধ্যে সম্প্রীতি বৃদ্ধি হবে। র্যাগিং কালচার থেকে বেরিয়ে আসার এটা একটা মাধ্যম হতে পারে এবং র্যাগিং মুক্ত ক্যাম্পাস গড়ে তোলার জন্য মাননীয় উপাচার্য মহোদয়কে ধন্যবাদ জানান।” এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় কে গবেষণা ও র্যাঙ্কিং এর উপরে নিয়ে যাওয়ার জন্য জিইবি বিভাগ সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে এই আশ্বাসও দেন তিনি।
জিইবি ডিপার্টমেন্ট এর অবদান উল্লেখ করতে গিয়ে বিভাগের শিক্ষকদের সম্পর্কে তিনি বলেন, “অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ, যিনি দুইবার ‘ইউজিসি’ অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন এবং একবার ‘ভিসি’ আওয়ার্ড পেয়েছেন। অধ্যাপক শাখিনুর ইসলাম মন্ডল, যিনি একবার ‘ভিসি’ আওয়ার্ড পেয়েছেন। অধ্যাপক জাকির হোসেন, যিনি ‘বাস টাওয়াস ইয়ং সাইন্টিস্ট’ অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন।”
তিনি এ বিভাগের শিক্ষার্থীদের সম্পর্কে বলেন, “ এ বিভাগের প্রায় ৩০ জন ছাত্র ছাত্রী বিভিন্ন ইউনিভার্সিটি তে শিক্ষক হিসেবে রয়েছেন, প্রায় ৭০ জন শিক্ষার্থী স্কলারশিপ পেয়ে উচ্চতর শিক্ষার জন্য দেশের বাইরে আছেন এবং এই বিভাগ থেকে ১০ থেকে ১৫ জন বিসিএস ক্যাডার রয়েছেন। এছাড়াও ৩০ থেকে ৩৫ জন বিভিন্ন ফারমাসিউটিক্যাল এবং অনেকে বিভিন্ন এনজিওতে কর্মরত আছেন।”
তিনি আরও বলেন, “ এ বিভাগে দশটি আদর্শ ল্যাবরেটরী রয়েছে, যেখানে আন্তর্জাতিক মানের গবেষণা করা হয়। ল্যাবগুলো বিভাগের শিক্ষক এবং শীক্ষার্থী দ্বারা পরিচালিত, যেখানে বিভাগের শিক্ষার্থীরা কাজের সুযোগ পেয়ে থাকে।” তিনি বিভাগের বিভিন্ন শিক্ষকের দ্বারা পরিচালিত, তাদের বিভিন্ন গবেষণা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা প্রদান করেন। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা অন্যান্য সাহায্য সহযোগিতার জন্য বিভাগ সব সময় তাদের পাশে রয়েছে এবং বিভাগের পক্ষ থেকে তাদের যে কোন ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্মানিত প্রক্টর অধ্যাপক জহির উদ্দিন আহমেদ বলেন ,”গত ১০ বছরে জিইবি বিভাগের যে সাফল্য এবং অগ্রযাত্রা বাস্তবিক অর্থে তা আসলেই ঈর্ষনীয়। শুধুমাত্র কেতাবি ছাত্র-ছাত্রী গড়ে তুলছি না পাশাপাশি সংস্কৃতমনা অসম্ভব মোটিভেটেড ছাত্র ছাত্রী তৈরী করছি।” তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, “তোমাদের অবশ্যই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যাবহারে সতর্ক থাযাবহার। বিভাগ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ক্ষুণ্ণ হয় এরকম কোন মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকতে হবে। তোমাদের ফলাফল ভালো হোক, মেধা মননের বিকাশ ভালো হো্ক আমাদের চিন্তা মেধা ও পরিশ্রম দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারিপাশ কে আর রঞ্জিত করো সে প্রত্যাশাই ব্যক্ত করছি।”
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ।অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, “আজ আমরা ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানাচ্ছি এবং তোমাদেরকে বরণ করে নিচ্ছি। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও বিদেশেও পরিব্যপ্তি রয়েছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম উত্তরোত্তর বৃদ্ধি করতে হবে। ” তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারকে ধন্যবাদ দিয়ে বলেন, “ ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা একটি স্বাধীন ভূখণ্ড পেয়েছিলাম, কিন্তু অর্থনৈতিক স্বাধীনতা আমরা তখনো পাইনি। এখন বাংলাদেশের অবস্থান অর্থনৈতিক ভাবে বেশ শক্ত। তাই বাংলাদেশ সরকার এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের গুণগত মান উন্নয়নের দিকে নজরদারি করছেন এবং তিনি তাদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির জন্য কিছু কর্ম পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষার জন্য বিভিন্ন দেশে যাওয়ার অনেক সুযোগ রয়েছে. এমনকি উন্নত বিশ্বে আমাদের প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের গবেষণার জন্য যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে।”
বিভাগীয় প্রধান এবং অনুষ্ঠানের সভাপতি অধ্যাপক ডঃ মোঃ শামসুল হক প্রধান তার বক্তব্যে বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় হলো জ্ঞান তৈরির জায়গা, আমাদের এখানে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন ফান্ডিং রয়েছে, গবেষণার পরিবেশ রয়েছে। গবেষণার জন্য নবীনদের উদ্দেশ্যে বলেন, “তোমরা উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে যে পড়াশোনা করেছ, যে পরিশ্রম করেছ ততটুকু যদি ধরে রাখতে পারো তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে অনেক উপরে উঠতে পারবে। আজকের এই সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা তোমাদের নেতৃত্ব ও জ্ঞান বিকাশের জায়গা। কিন্তু তার পাশাপাশি একাডেমিক পড়াশোনার দিকেও নজর রাখতে হবে এবং গবেষণা এগিয়ে নিতে হবে।
অনুষ্ঠানে সমাপনী বক্তব্য প্রদান করেন ‘জিইবি সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা-২০১৯’ অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক ও জিইবি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হাম্মাদুল হক। তিনি তার বক্তব্যে সার্বিক তত্ত্বাবধানের জন্য বিভাগীয় প্রধান ডঃ মোঃ শামসুল হক প্রধান এবং বিভাগের সকল শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।সে সাথে অনুষ্ঠান সুন্দর ও জাঁকজমকভাবে পরিচালনার জন্য আয়োজক কমিটিকে বিশেষ ধন্যবাদ প্রদান করেন।
তিনি তার শিক্ষার্থীদের আন্তরিকতায় মুগ্ধ হয়ে বলেন, “ একটি সফল অনুষ্ঠানের পেছনে থাকে কিছু মানুষের অক্লান্ত পরিশ্রম। আমি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি জিইবি সোসাইটির সকল সদস্যসহ আমাদের এই বিভাগের সকল প্রাণপ্রিয় শিক্ষার্থীদের, যারা তাদের ক্লাস ও পরীক্ষার পাশাপাশি তাদের অক্লান্ত পরিশ্রম দিয়ে আজকের এই অনুষ্ঠান জাঁকজমক করতে সহায়তা করেছে। আমি তোমাদের নিয়ে গর্বিত। দুর্নিবার গতিতে এগিয়ে যাক আমাদের প্রাণপ্রিয় বিভাগ, সকল উচ্চবৃত্তি কুশীলবদের পিছে ফেলে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় ভূমিকা রাখুক আমাদের এই বিভাগ।” পরিশেষে সবাইকে পরবর্তী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করার আমন্ত্রণ জানিয়ে তিনি তার বক্তব্য শেষ করেন।
‘জিইবি সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা-২০১৯’ অনুষ্ঠানটি সাজানো ছিল নাচ, গান, কবিতা আবৃত্তি, নাটক, ফ্যাশন শো, মূকাভিনয় দিয়ে। যা বিভাগের শিক্ষার্থীদের পরিচালিত হয়। বিভাগের সকল শিক্ষার্থীর সমন্বিত অংশগ্রহনে ‘জিইবি সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা-২০১৯’ সফলভাবে সমন্ন হয়।
অনুষ্ঠানের সর্বশেষ আকর্ষণ ছিল শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জিইবি বিভাগের নিজস্ব ব্যান্ড ‘ইন্ট্রোন্স’ এর সংজ্ঞীত পরিবেশনা। ব্যান্ড ‘ইন্ট্রোন্স’ তাদের সংগীত অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দর্শকদের মোহিত করেন ।
Copyright © 2024 SUST | Powered By Swapnoloke